মাটি ও জলবায়ুঃ অম্লধর্মী মাটি (পিএইচ ৪.৫ থেকে ৫.৮), বেলে দো-আঁশ মাটি চা চাষের জন্য ভাল। উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশ এবং তাপমাত্রা ২৬-২৮ ডিগ্রী সে. এবং বৃষ্টিপাত ২০০০ মিমি এর উপর, বাতাসে জলীয় অংশ অর্থাৎ আর্দ্রতা ৭০-৯০% চা চাষের জন্য উপযুক্ত।
জাতঃ বাংলাদেশের চা গাছগুলোকে প্রধানত: ৭ টি উপজাতে ভাগ করা যায়-আসাম জাত, মণিপুরী জাত, বার্মা জাত, চীনা জাত, হাইব্রিড-১, হাইব্রিড-২, হাইব্রিড-৩ ।
বীজ ও চারাঃ দুইভাবে চায়ের বংশ বিস্তার হতে পারে-বীজ দিয়ে এবং অঙ্গজ পদ্ধতিতে। এক হেক্টর জমি চাষ করতে প্রায় ৪০ কেজি বীজ দরকার। তবে উন্নতমানের গাছ তৈরির জন্য অঙ্গজ বংশবিস্তার গুরুত্বপূর্ণ। এটি দুইভাবে হয়- পাতার কলম (ষবধভ পঁঃঃরহম) ও ক্লেফট কলম (পষবভঃ মৎধভঃরহম)। এর ভেতর পাতা কলম বেশি জনপ্রিয়। তবে পুরানো গাছকে উন্নত জাতে পরিণত করার জন্য ক্লেফট কলম ভাল।
চারা রোপণঃ চারা রোপণের আগে অর্থাৎ জমি প্রস্তুতের সময়েই ৩ ফুট গভীর করে নর্দমা খনন করতে হবে। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতি একরে ২৫০০০ থেকে ৩৫০০০ চারা লাগালে ভাল ফল পাওয়া যায়। তবে সারিবদ্ধভাবে বেড়া পদ্ধতিতে লাগালে পাতা চয়ন ও পরির্চযার সুবিধা হয়। চারা রোপণের সময় প্রতি গর্তে ১৪ গ্রাম টিএসপি সার দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
ছায়া গাছ রোপণঃ আংশিক ছায়া যেখানে ৫০-৭০ ভাগ সূর্যের আলো আসে এরূপ ছায়াই উপযোগী। ২০ থেকে ৪০ ফুট দূরে দূরে একটি পূর্ণ বয়স্ক স্থায়ী গাছ থাকলেই চলে। কাকর শিরিস, সফেদ শিরিস, কালো শিরিস/ছাউ উল্লেখযোগ্য ছায়া গাছ (ঝযধফব ঃৎবব)। এছাড়া প্রয়োজনে কাঁঠাল, জাম, কড়ই ইত্যাদি গাছও লাগানো যায়।
মালচিংঃ মালচিং হিসেবে সবুজ ও নরম পাতা ব্যবহার করতে হবে। আপাতত কিছু না থাকলেও ধানের খড় ব্যবহার করা যেতে পারে।
পানি সেচ ও আগাছা দমনঃ শুকনো মৌসুমে প্রতি মাসে একর প্রতি জমিতে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পানির প্রয়োজন। এই পানি প্রতি ১৫ দিন পরে দুইবারে দেয়া যেতে পারে বা মাসে একবার দেয়া যায়। মাঝে মাঝে আগাছা দমন করতে হবে।
চা গাছ ছাটাই
- নার্সারি ছাঁটাই: বীজ ও কাটিং থেকে উৎপন্ন ৬-১০ মাস বয়সের চারা আনুমানিক ১৫ সেমি বা ৬ ইঞ্চি উচ্চতায় ধারাল ছুরি বা কাঁচি দ্বারা কেটে দিতে হয়।
 - অপরিণত বয়সে চারা ছাঁটাই: চা গাছ রোপণের পর থেকে ৫ (পাঁচ) বছর পর্যন্ত একে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা অপরিণত চা গাছ হিসেবে গণ্য করা হয়।
 - পরিণত বয়সে ছাঁটাই: পরিণত চা গাছ ছাঁটাই এর উদ্দেশ্য হল ফলনকালে গাছকে সব সময় সজীব ও পত্রময় এবং সীমিত উচ্চতায় রাখা।
 
সার ব্যবস্থাপনাঃ অপরিণত চায়ে বছরওয়ারী রাসায়নিক মিশ্রসার প্রয়োগ প্রণালী সাধারণত উক্ত অনুপাতে সার মিশিয়ে তিন দফায় (এক তৃতীয়াংশ করে) এপ্রিল/মে তে ১ম, আগস্টে ২য় এবং অক্টোবর/নভেম্বরে ৩য় দফায় প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। পাতা তোলা  অধিক ফলন ও গুণগত মানের লক্ষ্যে শুধু কচি ডগা নির্বাচন করাই লাভজনক। হাত দিয়ে পাতা নির্বাচনই সাধারণত প্রচলিত। সাধারণত এপ্রিল মাস থেকে পাতা তোলা আরম্ভ হয়ে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে শেষ হয়। প্রতি সাত দিন পর পর পাতা নির্বাচন করলে বৎসরে ৩০ থেকে ৩৬ বার পাতা তোলা যায়।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন
১.    লাল মাকড়: এদের আক্রমণে পাতা বিবর্ণ হয়ে কালচে রং ধারণ করে। দমনের জন্য ওমাইট ৫৭ ইসি ০.৪ মিলি./৪০০ লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
২.    চায়ের মশা: এটি ”টি হেলোপেলটিস” নামেও পরিচিত। ব্যাপক আক্রমণে নতুন পাতা গজানো বন্ধ হয়ে যায়। ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ৫ মিলি./লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
৩.    ব্লাকরট (পাতা পচা রোগ): পাতাগুলো প্রথমে হালকা বাদামী রং ধারণ করে ও ক্রমশ রঙ পরিবর্তিত হতে থাকে।
৪.    চারকোল স্টাম্পরট (শিকড়ের অঙ্গার রোগ): এর আক্রমণে হঠাৎ করে গাছ ঝিমিয়ে যায় ও মরে যায়।
পাতা সংগ্রহ ও পরিবহনঃ যথাশীঘ্র সম্ভব অক্ষত অবস্থায় পাতা কারখানায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা পাতা সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গেই পাতার উপাদানগুলোর পরিবর্তন শুরু হয়। অন্যদিকে পাতা টুকরি বা গাড়িতে দেয়ার সময় যেন চা পাতা রোদে না পুড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
 
                                                 
                                            
উত্তর সমূহ